বর্তমানে তরুণদের একটা বিরাট অংশ যেমন মারাত্মক ভাবে ডুবে আছে নেশায় তেমনি একটা বিশাল অংশ ডুবে রয়েছে মানসিক অবসাদে। কোনটাই সেই ব্যক্তি, পরিবার বা জাতির জন্য কম ক্ষতিকর নয়।
একজন লোকের প্রাণঘাতী নেশায় ডুবে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণের মধ্যে একটি মানসিক অবসাদ। আর অবসাদের পেছনেও রয়েছে নানা কারণ।
আজকের সমাজে লোক দেখানোর ব্যাপারটা প্রবল। কোন কাজ করে নিজে কতটা শান্তি পাবে বা কারো কতটা উপকার হবে তারচেয়ে বেশি চিন্তা প্রদর্শনের ব্যাপারে। এখন তো কেউ সঙ্গীকে অথবা অন্য কাউকে কতটা ভালবাসে তাও ফেসবুকে বা লোকের সামনে চিল্লিয়ে বলে, আর প্রকৃতপক্ষে জানেও না যে ভালবাসা খায় না মাথায় দেয়। লোক দেখানোর জন্য মানুষ কত কি যে করে আর কতটা নিচে নামে তার ইয়ত্তা নেই। অথচ এসব দেখে হয়ত কোন একজন বিমর্ষ তরুণ ভেবে বসে, পৃথিবীতে মানুষ কত আনন্দ-ফুর্তি করে যাচ্ছে আর তার ভাগ্যে কিছুই নেই।
এখন বেড়েছে শিক্ষার হার, অনেকেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। যখন একজন তরুণ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে গেল, পড়ে গেল বিপদে। যত বেশি তরুণ শিক্ষিত হচ্ছে তত বেশি বাড়ছে বেকারত্ব। যারা চাকরি পাচ্ছে তারাও পাচ্ছে না আশানুরূপ। যখন ১০ হাজার টাকায়ই লোক লাইন ধরছে চাকরির জন্য তখন সেই চাকরির জন্য কোম্পানি ২০/৩০ হাজার কেন দেবে? শিক্ষিতদের চাকরি না করে সমাজে মুখ দেখানো যাচ্ছে না, তাই তারা ১৫ হাজার টাকা বেতন পেয়ে লোকের কাছে বলছে ৪৫ হাজার বেতন পায়। অতঃপর সেই তরুণের কষ্ট হচ্ছে ভাল জীবনযাত্রা বজায় রেখে চলতে, না পরছে কাউকে বলতে। অপরদিকে কেউবা তাকে দেখে ভাবছে সে তো ৪৫ হাজারের চাকরি পেয়ে গেছে, আমার জীবনে কিছুই হল না।
ভাল চাকরি না পেলে কিছুই হবে না, না হবে ভাল জীবনযাপন, না পারবে পছন্দমত বিয়ে করতে, না হবে স্বপ্ন পূরণ, না পারবে অন্যদের মত নিজেকে প্রদর্শন করতে; অতঃপর কি বলবে সমাজ? বিকল্প কিছু ভাবতে পারছে না তরুণরা, সমাজ বিকল্প পছন্দ করে না।
ততদিন একজন লোক অবসাদে ডুবে থাকবে যতদিন না সে অন্যরা তাকে নিয়ে কি ভাবে তা না দেখে নিজের কি ভাল লাগে বা নিজের জন্য কোনটা ভাল সেটিকে বেশি গুরুত্ব দেবে।
আর যারা নিজেদের মাত্রাতিরিক্ত প্রদর্শনে ব্যস্ত, অজান্তেই তারা প্রায়শই লোকের সামনে উপহাসাম্পদ রূপে উপস্থাপিত হয়।
সোহান সরকার ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭