অনেক অভিভাবকদের কাছেই বাচ্চাকে তথাকথিত ভাল স্কুলে পড়ানোটা একটা ঢং হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অনেকেই আছেন যারা তাদের আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী বাচ্চাকে যে ধরণের স্কুলে পড়ানো উচিত তার চেয়ে ব্যয়বহুল স্কুলে পড়িয়ে থাকেন এবং সেখানে ভর্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন।
বিশেষ করে মফস্বল শহরগুলোতে অনেক আভিভাবকদের মাঝেই “অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী” প্রবাদের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। তারা বাচ্চাদের বাসার পাশের যে স্কুলে পড়াবেন না এবং আধা কিলোমিটার দূরের যে স্কুলে বাচ্চাকে ভর্তির জন্য ভর্তি যুদ্ধে ঠেলে দিচ্ছেন তা আদতে একই স্কুল। তারা নিজেরাও ঠিক জানেন না যে তার বাসার পাশের স্কুলের চেয়ে আধা কিলো দূরের স্কুলটা আসলে কেন ভাল। তাদের একটাই যুক্তি, সেই স্কুলে বেশি ভাল ফলাফল হয় মানে সহজ ভাবে বললে বেশি এ+ পায়। অথচ বাসার পাশের যে স্কুলে তার অর্ধেক এ+ পায় সে স্কুলে হয়ত ভর্তিও হয় অর্ধেক সেরকম ছেলেমেয়ে।
তবে সেসব ভেবে লাভ নেই, বাচ্চার মানসিক বিকাশ চুলোয় যাক, তাকে কেবল ভাল ফলাফল করতে হবে। বাচ্চাদের মাথায় এটাই ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে ভাল ফলাফলই সবকিছু। যে কারণে কোন বাচ্চা বলতে পারে, জিপিএ ৫ না পেলে আমার জীবন বৃথা হয়ে যেত। আসলে এই কথাটা তার না, দীর্ঘদিন ধরে পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাকে এটাই বুঝিয়েছে।
বাচ্চাদের বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবারের পরই শিক্ষকদের অবস্থান। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। আমাদের চারপাশে অসংখ্য স্কুল, কলেজ যেমন আছে তেমনি আছে অসংখ্য শিক্ষক। তবে ‘শিক্ষক’ শব্দটি গভীরভাবে চিন্তা করলে ব্যাপক অর্থ প্রকাশ করে। যেমন ‘মানুষ’ শব্দটি দিয়ে সাধারণভাবে সব মানুষদেরই বুঝায় কিন্তু “মানুষ হওয়া” কথাটায় ‘মানুষ’ অর্থ ভিন্ন। শিক্ষক দুই ধরণের, একটি হল, পড়াবেন, টাকা পাবেন, যাদেরকে বলা যায় পেশাদার। দেশে প্রাইভেট, কোচিং বাণিজ্য সম্পর্কে কারো অজানা থাকার কথা না। কিন্তু আরেক ধরণের শিক্ষক রয়েছেন যাদের শুধু শিক্ষক বললে বোঝা যায় না, তাদের বলতে হয় ”আদর্শ শিক্ষক।” এই শিক্ষকদের থেকে ছাত্ররা পড়ালেখার নির্দিষ্ট বিষয় ছাড়াও শিখতে পারে অনেক। আসলে একজন শিক্ষকের মাঝেই যদি আদর্শ না থাকে তাহলে তিনি তো বাচ্চাদের আদর্শ শেখাতে পারবেন না।
কোন বাচ্চা যদি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে অথবা অন্য কোন অনৈতিক কাজ করে তখন তার জন্য সে নিশ্চয়ই একা দায়ী নয়। পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকেই তারা সেসব শেখে। তার পরিবার, স্কুল অথবা আমরা সবাই মিলে তাকে শিখিয়েছি যে যেকোন মূল্যে তাকে পরীক্ষায় ভাল করতে হবে, নাহলে তার জীবন বৃথা হয়ে যাবে। এখানে পরিবারের মানে অভিভাবকদের বাড়াবাড়িই আসলে বেশি দায়ী।
সোহান সরকার ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮