প্রসঙ্গ ভাইরাল ভিডিও,
সম্ভবত ২০১৬ বইমেলার শেষ দিন, শেষ দিন বলেই স্টল বন্ধ হওয়ার পর সবার সাথে আড্ডা শেষ করতে রাত হয়ে গেছিল। স্টল থেকে নিজের লেখা বই ও পছন্দের বই দিয়ে ব্যাগ ভর্তি করে নিয়েছিলাম।
রাত ১১ টার কাছাকাছি হবে সম্ভবত, গুলশানে পুলিশ সিএনজি থামাতে বললেন, ব্যাগ দেখতে চাইলেন। আমি আগে থেকেই মুখে মাস্ক পরি, মাস্ক খুলে বললাম, আমি লেখক, বইমেলা থেকে ফিরছি। তিনি ব্যাগ না দেখেই “থ্যাংক ইউ” বলে ছেড়ে দিলেন।
আমি সাধারণ মানুষ, সরকার একটা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ডের সাথে এটাও সবসময় সাথে রাখি। পুলিশ আইডি কার্ড দেখতে চাইলে দেখাতে আপত্তি থাকার কোন কারণ নেই।
ইন্টার পরীক্ষার পর আমাকে মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়। হাতেগোনা কয়েকদিন গিয়ে আর যাই নি। যেহেতু আর কোন কোচিংয়ে ভর্তি হই নি তাই মূলত আমি কোন ধরণের ভর্তি কোচিং করি নি। আরো সহজভাবে বললে আমি জীবনে কোচিং করি নি বলা যায়, কোচিং জিনিসটা আমার তেমন পছন্দও না।
যা হোক, প্রসঙ্গ মেডিকেল, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, সরকারিতে চান্স পাই নি। পড়াশোনা না করলে চান্স পাওয়ার কথাও না। তবে যেকোন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া ভালভাবেই সম্ভব ছিল। বাসা থেকে সবাই সেটাই চাচ্ছিলেন। তবে মানুষের নিজের পছন্দ বলে কিছু থাকে, ডাক্তারিটা আমার নিজের জন্য ভাল লাগে নি। অন্যদের ভাল লাগতেই পারে, একেকজনের ভাললাগা একেক রকম।
আমার এসএসসিতে জিপিএ ৫ থাকলেও ইন্টারের ফলাফল তেমন ভাল না। এটার মানে এই না যে আমি এসএসসিতে মেধাবী ছিলাম আর পরে মেধা শেষ হয়ে গেছে। বিষয়টি এটিই যে আমি এসএসসিতে পরিশ্রম করেছিলাম আর ইন্টারে করি নি। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি মোটেও ভাল ছিল না। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েটিং থেকে চান্স পেয়েছিলাম, পছন্দের বিষয় পাই নি। নিজের ইচ্ছা ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, পরে জায়গা হল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী আছে, অবশ্যই ভাল প্রতিষ্ঠান থেকে। নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার লাগাই না, সাধারণত রাস্তায় কাউকে বলিও না, আমি ইঞ্জিনিয়ার। বিএসসি, ডিপ্লোমা বা কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়েও নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার দাবি করলে আমার কিছুই যায় বা আসে না। শুধু আমি না অন্য ইঞ্জিনিয়াররাও এতে নিজেদের দাম কমে যায় বলে মনে করেন না। এটুকু উদারতা কেন যেন থাকে ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে।
এখন কথা হল, কিছু ডাক্তারের মধ্যে অহংকার চরমে, তারা হোমিও, আয়ুর্বেদিক ডাক্তারদের ডাক্তার মনে করেন না। এ ডাক্তার না, ও ডাক্তার না এসব নিয়ে অনেক পোস্ট ফেসবুকেও চোখে পড়ে। তারা এটাও মনে করে যে যারা মেডিকেলে পড়তে পারে না তারাই কেবল অন্যকিছু পড়ে। তারা নিজেদের অনেক বেশি জ্ঞানী মনে করেন। তাহলে আমিও কি ইন্টার পাশের পর ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়ে ডাক্তারি পড়লে বেশি জ্ঞানী হয়ে যেতাম? এক্ষেত্রে আমি উল্টোটা মনে করতেই পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার একটা আলাদা ধরণ থাকে। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় পরিবেশ বিজ্ঞান, পাবলিক হেলথ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, মনোবিজ্ঞান, দর্শন পড়েছি। এই বিষয়গুলোর সাথে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর সম্পর্ক নেই, কিন্তু এগুলো থেকে আমি অনেকে কিছুই শিখেছি।
কোন নির্দিষ্ট পেশায় কেউ ঢুকলেই মহান হয়ে যায় না বা খারাপ হয়ে যায় না। কোন নির্দিষ্ট পেশার সবাই ভাল বা সবাই খারাপও হয় না। আর এটা বোঝার মত ক্ষমতা অনেক সময় অনেক শিক্ষিত লোকদের মধ্যেও দেখি না।
শেষকথা, সম্মান চেয়ে পাওয়া যায় না। আপনি যে পেশারই হোন ভাল মানুষ হলে, আপনার ব্যবহার মানুষের মত হলে সবাই আপনাকে সম্মান করবে, ভালবাসবে, জোড় করে সম্মান চাইতে হবে না।
সোহান সরকার ১৮ এপ্রিল, ২০২১