একটা সময় শোনা যেত, ছেলেরা সেলুনে গেলেও নাকি এইডসে সংক্রমিত হতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হত যে নরসুন্দর (নাপিত) একই ব্লেড একাধিক ব্যক্তিকে ব্যবহার করাতে পারে। কেউ কেউ ভয়ে ভয়ে সেলুনে যেত তখন।
আসলে ব্যাপারটা ছিল একটা গুজব। এভাবে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে কারণ এইচআইভি ভাইরাস সাধারণত মানুষের শরীরের বাইরে স্বাভাবিক পরিবেশে কয়েক মিনিটের বেশি বাঁচে না। নাপিতের কাছে আগে একজনের কোথাও কেটে রক্ত বের হয়ে ব্লেডে লেগে থাকবে আর সেই লোকই হবে এইডস এ আক্রান্ত, তারপর আবার অল্প সময়ের মধ্যেই আরেকজনের কেটে রক্তে ভাইরাস মিশে যাবে এমন সম্ভাবনা আসলে খুবই কম। তবে যারা নেশা করে তারা একজনের পর অন্যজন একই সুই-সিরিঞ্জ দিয়ে নেশার কিছু রক্তে ঢোকালে আর সেটায় সময়ের ব্যবধান কম হলে এভাবে সংক্রমিত হতেই পারে। এছাড়া ছড়ানোর অন্যান্য উপায়গুলো তো আমাদের অজানা নয়।
যা হোক, ভাল বিষয় হল, আমরা জাতি হিসেবে অসভ্য নই বলে আমাদের দেশে এইচআইভি তেমন ছড়াতে পারে নি। তাই এ নিয়ে এখন খুব একটা কথাও হয় না। তবে গুজব থেমে নেই।
আসলে কথা বলতে চাচ্ছি গুজব নিয়ে। গুজব আগেও ছিল, এখনো আছে। এখন গুজব ছড়ানো অনেক সহজ, কারণ সবার হাতে ইন্টারনেট।
কখনো কখনো ফেসবুকে কিছু লোকজন মেসেজ পাঠায় আর বলে এটা কয়েকজনকে পাঠাতে, হয়ত তাদেরকে অন্যকেউ পাঠিয়ে বলেছিল অন্যদের পাঠাতে। কখনো এমন কেউ এ ধরণের মেসেজ পাঠায় যে দেখে অবাক হই, তারাও এসব জানে না, তারাও এসব বিশ্বাস করে!
এ ধরণের মেসেজের বিষয়বস্তু বিভিন্ন হয়। কখনোবা বলা হয় যে এটা অন্যকে না পাঠালে ফেসবুক একাউন্টের ক্ষতি হবে, ইত্যাদি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইসলামের নাম ব্যাবহার করা হয় এসবে। বলা হয়, পাঠালে মনের ইচ্ছা পূরণ হবে অথবা না পাঠালে ক্ষতি হবে। কোন সন্দেহ নেই যে তাদের ধর্মীয় জ্ঞান খুব কম বলেই এসব করে, কারণ এ ধরণের জিনিস কাউকে ফরোয়ার্ড না করলে ক্ষতি হবে এসব কথার কোন ভিত্তি ইসলামে নেই।
তখন যতদূর মনে আছে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। কেউ একজন একটা কাগজ নিয়ে এসেছিল যাতে বলা ছিল, এটা যে পাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাপিয়ে অন্যদেরকে দিতে হবে। না দিলে বিশাল ক্ষতির কথা বলা ছিল আর দিলে লাভ। একজন জানার জন্য সেটা নিয়ে আমাদের ইসলাম শিক্ষার শিক্ষকের হাতে দিলে স্যার ওটা ছিঁড়ে ফেলে দেন আর আমাদের ওগুলো বিশ্বাস না করতে বলেন।
তার মানে যে গুজব আগে ছাপিয়ে ছড়িয়ে দেয়া হত তা এখন ইন্টানেটে ছড়ানো হয়।
প্রথমে এইচআইভি নিয়ে কথা বলছিলাম যার গুজবও এখনো থেমে নেই। এমন একটা গুজব মেসেঞ্জারে ভাসছে যে বাজারের কিছু খাবার বা পানীয় তে নাকি কারা এইচআইভি মিশিয়ে দিয়েছে। তাই সেই মেসেজ যাতে সবাইকে পাঠিয়ে সচেতন করা হয়।
জানি না এসবের শুরুটা কিভাবে হয়েছিল। তবে শুরুর পর আর থেমে নেই। আপনি গুজব বিশ্বাস করবেন বা না করবেন সেটা আপনার ব্যাপার। তবে সেটা কাউকে পাঠানোর আগে অবশ্যই ভাবা উচিত। আসলে যেকোন কিছুই কাউকে পাঠানোর আগে ভাবা উচিত। যে জিনিসটা আপনি নিশ্চিত না সেটা আরেকজনকে পাঠানোর চেয়ে সেটা ঠিক কিনা নিজে নিশ্চিত হওয়াটাই বেশি প্রয়োজন।
সোহান সরকার ৩ অক্টোবর, ২০১৮